Thursday, 29 March 2018

নারী তোমার আকাশ মুক্ত করো (বিশ্ব নারী দিবসে লেখা ২০১৮)


আজ সেই চেনা 8ই মার্চ। হিড়িক করে ধূম শুভেচ্ছা দেওয়া নারীদের!!!!! আর নারীদের ও একদিন নারীত্বের জয়গান।

ব্যস আর কী ফরমালিটি কমপ্লিট। হুম 'সম্মান' বললাম না, তাই অবাক হলে তো যে পড়ছ? বলিনি কারণ, এটা একটা লোকদেখানো সিম্পল ফরমালিটিতে এসে ঠেকেছে, কারণ আর যাই হোক 'সম্মান' একদিনে দেখানো যায় না। এটা মুখে না বললেও মানো সেটা বুঝি।

একটা লাইন বলি শোনো। একদিন হঠাৎ আমার বোন আমাকে একটা লেখা হাতে দিয়ে বললো, "পড় দিদি, তোর ভাবনা দেখ।"
অবাক হয়ে পড়লাম। তবে লেখক/ লেখিকা জানা গেলো না!! তবে মন থেকে সম্মান জানিয়েছিলাম ওকে ঐদিনই, যে মানুষটার কল্পনাটাও কতটা স্ট্রঙ তাহলে মানুষটা কতটা মজবুত হবে।

লাইনটা এইরূপ "বাবু বিয়ে করে বৌমাকে ঘরে তুলেছে, আজ ওদের ভাত কাপড়। শ্বাশুড়ী মা একজনের কাছে ভাতের থালা চাইলেন, সেই সাজানো থালা বৌমার হাতে তুলে বললেন, "নে মা, এবার বাবুর হাতে দিয়ে বল আজ থেকে তুই ওর ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিবি", বৌ সহ সকলেই স্তমিত। আজ সে পেরেছে জগতটাকে বদলে দিতে। বৌমা জড়িয়ে হাপুস নয়নে কেঁদে উঠে বলেছে তুমি আমার মা।"

এই মূহুর্তে যদি এটা কোনো মেয়ে পড়ছ লাইনগুলো, তবে কল্পনাতে এর পিকচারইজেশন করছ, তবে হলফ করে বলতে পারি জীবনে এ সাহস নিজে শ্বাশুড়ী হয়ে দেখাতে পারবে না। কারণ তুমি তখন so called শ্বাশুড়ী মা, সকল কিছুই তোমার হুকুমে। এইরূপ একটা মেঘাচ্ছন্ন জগতে তুমি ঘোরাফেরা করবে, তাই বলে রাখি তুমি আর আজকের দিনটা ঘটা করে শুভেচ্ছা দেওয়া নেওয়া করো না।

আর যদি কোনো ছেলে পড়ছ, নির্ঘাত ভাবছ, সত্যি গল্পে গরুও গাছে চড়ে। তাই বলব, অকারণে কেন এতো সম্মানের একদিনের প্রদর্শনী করছ বাপু।

তবে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত না থাকলে রেকর্ড কারা তৈরী করবে, আর তাতে করতালি পড়বে কী করে।

সোজা কথায় বিশেষ ঘেরাটোপের দরকার পড়ে না। এই দেখো না আজ কতো সফল মেয়ের উদাহরণ সকলের ফেসবুক দেওয়ালে আর ওয়াটস অ্যপের স্টেটাসে উপচে পড়ছে। এরকমটা হও, সেরকমটা হও, ইত্যাদি।

এরপর একটা অন্য বিষয় ভাব তো দেখি,আজ যারা ঐ উদাহরণ এ এসেছে তাদের জীবন কাহিনী গুলো পড়ো, কতটা কঠিন পথ পেরোতে হয়েছে, কতো সম্পর্ক হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে, কত অপমানের পর মানের লকেট গলায় এসেছে। তবু ওরা কিন্তু 'নারী" আর তারা উদাহরণ। তবু কেও ওদের হারাতে পারেনি।
তাই যদি হতে চাও 'নারী' তবে নিজের গাটস টা জাগাও নিজেকে নতো করো না।

আজ এতো কাজের মাঝে থাকা আমিও কখনো ভাবী, আজ একটা কাজ সেরে র্নিদ্বিধায় দশটাতেও বাড়ী ফিরি। নাহহ বাবা মা জানে মেয়ে কাজে আছে, একটা কথা "ফোনটা অন রাখিস, আর নিতে যেতে হলে বলিস।"
তারা জানে দরকার পড়বে না। তবু কর্তব্য করে যায়, বাবা মা তো।
তবে এই সাহসী মেয়ে যখন একা নিজের জীবন ডায়েরী গুছোয়, ভীত হয় একটা কথা ভেবে!!! যদি বিয়ে করি? শ্বাশুড়ী শ্বশুর নেবেন কেমনভাবে? তবে কী দূরত্ব আসবে? চাই না সম্পর্কের দূরত্ব।
এই যে ভয়??? কাকে নিয়ে পেলাম? একজন মেয়েকে, ইশশশ!!!! কী লজ্জা। একজন মেয়ে আর একজন মেয়েকে বুঝবে না, এর থেকে বেশী লজ্জার কিছু হয় না।

একজন মেয়ে যখন তার ছেলেকে বিয়ে করতে পাঠান, তার সামনেই নাকী তাকে বলতে হয় "মা তোমার জন্য দাসী আনতে যাচ্ছি"।
এর থেকে একটা মেয়ে কতটা বেশী অপমানিত হতে পারে? আর একজন মেয়ে তাতে প্রশ্রয় দিচ্ছে!!!! তাহলে কী বলব?
পারবে তো নারীত্বের জয়গাঁথা রচিত হতে।

বিয়ের সিঁদুরদানের সময় লজ্জাবস্ত্র দিয়ে বলা হয়, "আজ থেকে লজ্জা চাপুক, মাথায় ঘোমটা উঠুক"
আবারো একজন মেয়ে আরেক মেয়েকে অপমান করলো।

চাকরীরতা বৌ ছেলে দুজনায় অফিস থেকে খেটে ফিরে আসতেই মা বলে উঠলেন, "বৌমা চাটা বসাবে তো? বাবুটা সেই সকালে খেয়ে বেরিয়েছে"
আরো একবার একজন মেয়ের থেকে পাওয়া অপমান।

সামান্য কটা নমুনা বললাম ভেবে দেখো ও দেখুন দেখি, জীবনে আর কী কী ভাবে নিজের সাথে সাথে আরো নারীকেও অপমান করে চলেছেন!!!!!

এরপরোও ভাবেন যে অন্যকেউ আপনার নারীত্বকে সম্মান করবে।
তবে আপনার এই ভাবনায় মুখ টিপে একটু হাসলাম। হুম এটাই আপনার সম্মান।

এতো যতো নিয়ম বানিয়ে রেখেছেন, তা আপনারা। হুম আপনারা, 'নারীরাই' বানিয়েছেন। কোথাও এসব ভাট কথা লেখা নেই।

আর একটা কথা বলি, জানেন তো নিয়ম তৈরী হয় নিয়ম কে ভাঙার জন্য।

তাই সত্যি যদি নারী দিবস পালন করতে চান, এই অহেতুক নিয়ম গুলোকে এক এক করে ভাঙুন। আর আগে নারী হিসেবে নিজেকে ও অন্য নারীকে সম্মানটা দিন।
তারপর আশা করবেন বাকীরাও আপনার মান রাখবে।

আজ এই একটাদিন শুভেচ্ছার ভুরিভোজ না রেখে, প্রতিজ্ঞা করুন নিজের বিবেকের কাছে, আজ এই দিন থেকে আপনার নারীত্বকে নিজে সম্মান করবেন।আর নিজের ভার নিজে নেবেন।

ভীষণরকম নারীর তরফদার আমি তাই কঠিন কথা গুলোয় বললাম সহজ ভাষায়। ভালো থাকুন আর ভালো রাখুন।

No comments:

Post a Comment