Wednesday, 28 March 2018

শ্রী আজ থেকে তুমি দেবী

আজ হঠাৎ সকালে কান ফাটিয়ে কটা কথার কলি ঢুকল, "নেই রে দিদি শ্রীদেবী আর!!!" ধমক দিয়ে বললাম, "সকালে বাজে কথা বকিস কেন হুম?" সবার মতো আমিও নিতে পারিনি এই চরম কঠিন কষ্টকর বাস্তবটা।

হঠাৎ মনের কালো মেঘটার সাথে আকাশের মেঘটাও তাল মেলালো, গুম করে এলো চারিদিক, কয়েক পশলা চোখের জল ও ফেললেন ঈশ্বর। কারণ নিজের সৃষ্টিকে নিজের হাতে মুছে ফেলতে সত্যি ভীষণ কষ্ট হয় তারও। যতবার টিভি স্ক্রিনে দেখছি 1963-2018 "শ্রীদেবী নেই" এটা বারবার শিউরে দিচ্ছে গা আমার।

মেঘের আকাশে আজ কিন্তু চাঁদটা উঠেছিল, তবে তাতে আজ "চাঁদনী" ছিল না। কারণ "রূপের চাঁদনী"কে যে স্বয়ং ঈশ্বর কেড়ে নিলেন সবার থেকে।

"মাত্র চার বছর, চার বছর" শুনেও কানটা ঝলসে গেল, তবে এটা কেউ বুঝল না, 'জন্মে কেউ শিল্পী হয় না, শিল্পী হয়েই তার জন্ম হয়' তাই আমাদের "চাঁদনী" এর ব্যতিক্রম না। তবে ব্যতিক্রমীতাই শিল্পীকে তার জায়গা করে দেয়, আর তাই রূপের মাঝে চোখের কারুকার্যতায় অভিনয়ের মাঝে হাস্যকৌতূক রচনাই তার শ্রেষ্ঠত্ব।

তাইতো একজন নারী হয়ে চার্লি চ্যাপলিনের রোলে নিজেকে হিট করার রিস্ক বোধ হয় শ্রীদেবী-ই নিতে পেরেছিলেন।

যখন প্রতিটা হৃদয় তার কাজলের রেখা দিয়ে নিজেদের মনে "চাঁদনী" লিখে চলেছে, তখন তিনি অভিনয়ে উত্তেজনা তুলে রোম হর্ষক কায়দায় গেয়ে উঠলেন "I love you" ।
সেই আদুরে আবদারে পা দিয়ে, যেই মন দিয়ে দিল সকলে, তক্ষুনি কায়দায় বলে দিলেন, "মেরে হাতো মে ন ন চুড়িয়া হ্যায় থোড়া ঠেহেরো সজন মজবুরিয়া হ্যায়।"

কখনো মনের আনন্দের প্রকাশ করেছেন, পেখম মেলে "মোরণী বাগাম গেয়ে।" আবার, "তেরে মেরে হোঁটো মে মিঠে মিঠে গীত মিতওয়া" গেয়ে প্রেমচারিতার অন্য দিকের উদঘাটন করেছেন তিনি।

কখনো আবার কেরিয়ারের উজ্জ্বলময় স্বর্নালী দিনগুলোতে সম্মুখ সমরে দাঁড়িয়ে, প্রকাশ্যে বলেগেছেন, "ম্যা তেরী দুশমন, দুশমন তু মেরা", এই বলে শত্রুকে ছোবলের ভয় ঐ দুই চোখের ইশারাতেই দিয়ে দিয়েছিলেন। "নাগিন" চোখে না দেখাগেলেও, ওনার চোখের ইশারায় "নাগিনের" মাহাত্ম্য সমহিমায় প্রকাশ পেয়েছে।

এতো কিছুর পরোও যদি একটু গর্বান্বীত না হন তিনি, তা হলে কী আর মানায়!!! তাই রূপের রাণী "শ্রী" নিজেই বললেন, "মেরি বিন্দিয়া, তেরী নিন্দিয়া, না উড়াদে তো কেহনা!!"
সত্যি তো তার শিল্পের তৈরী করা মায়াজালে, তিনি বন্দী করে ফেলতে পেরেছিলেন আট থেকে আশিকে। সবারই তো ঘুম কাড়তে পেরেছিলেন, আর তার কাজল নয়নে তাকিয়ে পাগল না হয়ে বোধ হয় ঈশ্বরও ছাড় পাননি।

"রাপিচিকি লাকিচিকি, চিকিলাকি চিকিচুম" যাহহহ!!! কী ভাষায় গান গায়ছেন তিনি? কেউ বুঝল না, তবে তার এই সুর সবার মুখে ফিরতে লাগল।
সত্যি তিনি "স্বপ্নের রাণী" তাই তো, আজ যখন তিনি স্বর্গরাজ্যে পা দিলেন, তখনও কড়কড়ানি শব্দে প্রমান হলো 'বাদলে মোড়া চুল যার, আর ভঙ্গিতায় বিজলির সমানতা' তিনি কী আর নিঃশব্দে কোথাও প্রবেশ করতে পারেন? যখন 'দাপট' তার অলংকার। তবে নিঃশব্দে মিলিয়ে গেলেন আজ হাওয়াতে, আমাদের "হাওয়া হাওয়ায়ি।"

যখন বেশ কয়েক বছরের মৌন ব্রত কাটিয়ে বেরিয়ে এলেন "রাণী" তখন আবার তার নখরিলে কায়দায় "নবরায়ী মাজির" ঠুমকাতে ইংলিশ ও পুরো ফ্ল্যাট।
পেরিয়ে গেল সময়, সময়ের হিসেব পের করে। কখনো কখনো হয়তো জীবনের কঠিন টানাপোড়েনে তিনিও মিষ্টি স্বপ্ন চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন শান্তির ঘুম, তবে তখন ঘুম জোটেনি তার, শুধুই পরীক্ষার যোজ্ঞে আহুতি দিয়ে গেছেন।

তবে যখন কারোর যাওয়ার ডাক আসে, তাকে তো যেতেই হয়। তাই সেদিন "তু না যা বাদশা" বলেছিলেন বলে ঐদিন বাদশা থেমে গেলেও, আজ তার বেগম জুটির জোড় কেটে চলে গেল। তাই হয়তো রাত্রিতে মৃত্যু বেগমকে নিতে এলে, বাদশা "আমিতাভ" স্বয়ং অস্থির বোধ করেছিলেন।এতো শিল্পীর মনের সাথে আরেক শিল্পীর নীরব টান।

কেবল আজ নিঃশব্দে আমাদের "চাঁদনী" নিজের রেকর্ড তৈরী করেই, চলে গেলেন চিরতরে, আরো একবার বলে গেলেন সেই চিরন্তনী কথা গুলো, "কিসিকি হাত না আয়েগি ইয়ে লডকী।"

আর এই 'ছিল' থেকে 'ছিলেন' এর "সাদমা" কেও হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবে না আজীবন।

ইন্ডাস্ট্রি "শ্রী" কে হারালেও, তিনি সেখানে অমরত্বের দাবী নিয়ে "দেবী" রূপেই প্রতিষ্ঠিত থাকবেন জানি ও মানি।

No comments:

Post a Comment