Thursday, 29 March 2018

দুঃখ তুই হাস

উড়িয়ে দিলাম একআঁচল আনন্দ, এই দুঃখ ভরে নে তোর মুঠোতে, ঐ ক্ষুদ্র হাতের মাঝেই।

দেখবি দুঃখ, তোর মাঝের দুঃখই, এক গাল হেসে উঠে, পাল্টা তোকে বলবে,
"এই দুঃখ, তোর এতো দুঃখ কেন রে?? হাস না একবারটি ঐ মেয়েটার মতো। দেখবি, তোর সব দুঃখ মুছে যাবে এক নিমেষে!!!!
আর ঐ উষ্ন হাসির ছোঁয়ায়, তোর সব দুঃখ এক চুটকিতে উড়ে গিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে প্রাণের অস্তিত্বের আনন্দে।"

একবার প্রাণ খুলে হেসে দেখ, দেখবি দুঃখের ঘন কালো আবেশ কাটিয়ে তোর গোমড়াপানা মুখ বেয়ে নেমে আসছে এক স্নিগ্ধ হাসি।

এই দুঃখ হাস নারে একবারটি!!!! এই দুঃখ, তোর দুঃখ ভুলে, এই আঁচলে ঢেকে ফ্যাল দেখি নিজেকে।

নারী তোমার আকাশ মুক্ত করো (বিশ্ব নারী দিবসে লেখা ২০১৮)


আজ সেই চেনা 8ই মার্চ। হিড়িক করে ধূম শুভেচ্ছা দেওয়া নারীদের!!!!! আর নারীদের ও একদিন নারীত্বের জয়গান।

ব্যস আর কী ফরমালিটি কমপ্লিট। হুম 'সম্মান' বললাম না, তাই অবাক হলে তো যে পড়ছ? বলিনি কারণ, এটা একটা লোকদেখানো সিম্পল ফরমালিটিতে এসে ঠেকেছে, কারণ আর যাই হোক 'সম্মান' একদিনে দেখানো যায় না। এটা মুখে না বললেও মানো সেটা বুঝি।

একটা লাইন বলি শোনো। একদিন হঠাৎ আমার বোন আমাকে একটা লেখা হাতে দিয়ে বললো, "পড় দিদি, তোর ভাবনা দেখ।"
অবাক হয়ে পড়লাম। তবে লেখক/ লেখিকা জানা গেলো না!! তবে মন থেকে সম্মান জানিয়েছিলাম ওকে ঐদিনই, যে মানুষটার কল্পনাটাও কতটা স্ট্রঙ তাহলে মানুষটা কতটা মজবুত হবে।

লাইনটা এইরূপ "বাবু বিয়ে করে বৌমাকে ঘরে তুলেছে, আজ ওদের ভাত কাপড়। শ্বাশুড়ী মা একজনের কাছে ভাতের থালা চাইলেন, সেই সাজানো থালা বৌমার হাতে তুলে বললেন, "নে মা, এবার বাবুর হাতে দিয়ে বল আজ থেকে তুই ওর ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিবি", বৌ সহ সকলেই স্তমিত। আজ সে পেরেছে জগতটাকে বদলে দিতে। বৌমা জড়িয়ে হাপুস নয়নে কেঁদে উঠে বলেছে তুমি আমার মা।"

এই মূহুর্তে যদি এটা কোনো মেয়ে পড়ছ লাইনগুলো, তবে কল্পনাতে এর পিকচারইজেশন করছ, তবে হলফ করে বলতে পারি জীবনে এ সাহস নিজে শ্বাশুড়ী হয়ে দেখাতে পারবে না। কারণ তুমি তখন so called শ্বাশুড়ী মা, সকল কিছুই তোমার হুকুমে। এইরূপ একটা মেঘাচ্ছন্ন জগতে তুমি ঘোরাফেরা করবে, তাই বলে রাখি তুমি আর আজকের দিনটা ঘটা করে শুভেচ্ছা দেওয়া নেওয়া করো না।

আর যদি কোনো ছেলে পড়ছ, নির্ঘাত ভাবছ, সত্যি গল্পে গরুও গাছে চড়ে। তাই বলব, অকারণে কেন এতো সম্মানের একদিনের প্রদর্শনী করছ বাপু।

তবে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত না থাকলে রেকর্ড কারা তৈরী করবে, আর তাতে করতালি পড়বে কী করে।

সোজা কথায় বিশেষ ঘেরাটোপের দরকার পড়ে না। এই দেখো না আজ কতো সফল মেয়ের উদাহরণ সকলের ফেসবুক দেওয়ালে আর ওয়াটস অ্যপের স্টেটাসে উপচে পড়ছে। এরকমটা হও, সেরকমটা হও, ইত্যাদি।

এরপর একটা অন্য বিষয় ভাব তো দেখি,আজ যারা ঐ উদাহরণ এ এসেছে তাদের জীবন কাহিনী গুলো পড়ো, কতটা কঠিন পথ পেরোতে হয়েছে, কতো সম্পর্ক হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে, কত অপমানের পর মানের লকেট গলায় এসেছে। তবু ওরা কিন্তু 'নারী" আর তারা উদাহরণ। তবু কেও ওদের হারাতে পারেনি।
তাই যদি হতে চাও 'নারী' তবে নিজের গাটস টা জাগাও নিজেকে নতো করো না।

আজ এতো কাজের মাঝে থাকা আমিও কখনো ভাবী, আজ একটা কাজ সেরে র্নিদ্বিধায় দশটাতেও বাড়ী ফিরি। নাহহ বাবা মা জানে মেয়ে কাজে আছে, একটা কথা "ফোনটা অন রাখিস, আর নিতে যেতে হলে বলিস।"
তারা জানে দরকার পড়বে না। তবু কর্তব্য করে যায়, বাবা মা তো।
তবে এই সাহসী মেয়ে যখন একা নিজের জীবন ডায়েরী গুছোয়, ভীত হয় একটা কথা ভেবে!!! যদি বিয়ে করি? শ্বাশুড়ী শ্বশুর নেবেন কেমনভাবে? তবে কী দূরত্ব আসবে? চাই না সম্পর্কের দূরত্ব।
এই যে ভয়??? কাকে নিয়ে পেলাম? একজন মেয়েকে, ইশশশ!!!! কী লজ্জা। একজন মেয়ে আর একজন মেয়েকে বুঝবে না, এর থেকে বেশী লজ্জার কিছু হয় না।

একজন মেয়ে যখন তার ছেলেকে বিয়ে করতে পাঠান, তার সামনেই নাকী তাকে বলতে হয় "মা তোমার জন্য দাসী আনতে যাচ্ছি"।
এর থেকে একটা মেয়ে কতটা বেশী অপমানিত হতে পারে? আর একজন মেয়ে তাতে প্রশ্রয় দিচ্ছে!!!! তাহলে কী বলব?
পারবে তো নারীত্বের জয়গাঁথা রচিত হতে।

বিয়ের সিঁদুরদানের সময় লজ্জাবস্ত্র দিয়ে বলা হয়, "আজ থেকে লজ্জা চাপুক, মাথায় ঘোমটা উঠুক"
আবারো একজন মেয়ে আরেক মেয়েকে অপমান করলো।

চাকরীরতা বৌ ছেলে দুজনায় অফিস থেকে খেটে ফিরে আসতেই মা বলে উঠলেন, "বৌমা চাটা বসাবে তো? বাবুটা সেই সকালে খেয়ে বেরিয়েছে"
আরো একবার একজন মেয়ের থেকে পাওয়া অপমান।

সামান্য কটা নমুনা বললাম ভেবে দেখো ও দেখুন দেখি, জীবনে আর কী কী ভাবে নিজের সাথে সাথে আরো নারীকেও অপমান করে চলেছেন!!!!!

এরপরোও ভাবেন যে অন্যকেউ আপনার নারীত্বকে সম্মান করবে।
তবে আপনার এই ভাবনায় মুখ টিপে একটু হাসলাম। হুম এটাই আপনার সম্মান।

এতো যতো নিয়ম বানিয়ে রেখেছেন, তা আপনারা। হুম আপনারা, 'নারীরাই' বানিয়েছেন। কোথাও এসব ভাট কথা লেখা নেই।

আর একটা কথা বলি, জানেন তো নিয়ম তৈরী হয় নিয়ম কে ভাঙার জন্য।

তাই সত্যি যদি নারী দিবস পালন করতে চান, এই অহেতুক নিয়ম গুলোকে এক এক করে ভাঙুন। আর আগে নারী হিসেবে নিজেকে ও অন্য নারীকে সম্মানটা দিন।
তারপর আশা করবেন বাকীরাও আপনার মান রাখবে।

আজ এই একটাদিন শুভেচ্ছার ভুরিভোজ না রেখে, প্রতিজ্ঞা করুন নিজের বিবেকের কাছে, আজ এই দিন থেকে আপনার নারীত্বকে নিজে সম্মান করবেন।আর নিজের ভার নিজে নেবেন।

ভীষণরকম নারীর তরফদার আমি তাই কঠিন কথা গুলোয় বললাম সহজ ভাষায়। ভালো থাকুন আর ভালো রাখুন।

রঙিন ছোঁয়া


যখন জীবনের একঘেয়েমিতা তোমাকে বিরক্তির দোর গড়ায় এনে দাঁড় করাবে।
মনের কপাটখানি খুলে দেখো, আমি আলগোছে দাঁড়িয়ে আছি তোমাকে আরো একবার রঙিন আনন্দের মোড়কে মুড়ে ফেলতে।

যাতে আলসেমি কাটিয়ে তুমি জীবনের রঙ্গ মঞ্চে তোমার চরিত্রখানি আনন্দের রঙে ও রসনাই এ রঙিন করে নিতে পারো।
আর মৃত্যুরূপী কালো পর্দার ওপার থেকেও তোমার চরিত্রের অমরত্বের ঝলকানি ঝিলিক দিয়ে যেতে পারে বারে বার।

Wednesday, 28 March 2018

শ্রী আজ থেকে তুমি দেবী

আজ হঠাৎ সকালে কান ফাটিয়ে কটা কথার কলি ঢুকল, "নেই রে দিদি শ্রীদেবী আর!!!" ধমক দিয়ে বললাম, "সকালে বাজে কথা বকিস কেন হুম?" সবার মতো আমিও নিতে পারিনি এই চরম কঠিন কষ্টকর বাস্তবটা।

হঠাৎ মনের কালো মেঘটার সাথে আকাশের মেঘটাও তাল মেলালো, গুম করে এলো চারিদিক, কয়েক পশলা চোখের জল ও ফেললেন ঈশ্বর। কারণ নিজের সৃষ্টিকে নিজের হাতে মুছে ফেলতে সত্যি ভীষণ কষ্ট হয় তারও। যতবার টিভি স্ক্রিনে দেখছি 1963-2018 "শ্রীদেবী নেই" এটা বারবার শিউরে দিচ্ছে গা আমার।

মেঘের আকাশে আজ কিন্তু চাঁদটা উঠেছিল, তবে তাতে আজ "চাঁদনী" ছিল না। কারণ "রূপের চাঁদনী"কে যে স্বয়ং ঈশ্বর কেড়ে নিলেন সবার থেকে।

"মাত্র চার বছর, চার বছর" শুনেও কানটা ঝলসে গেল, তবে এটা কেউ বুঝল না, 'জন্মে কেউ শিল্পী হয় না, শিল্পী হয়েই তার জন্ম হয়' তাই আমাদের "চাঁদনী" এর ব্যতিক্রম না। তবে ব্যতিক্রমীতাই শিল্পীকে তার জায়গা করে দেয়, আর তাই রূপের মাঝে চোখের কারুকার্যতায় অভিনয়ের মাঝে হাস্যকৌতূক রচনাই তার শ্রেষ্ঠত্ব।

তাইতো একজন নারী হয়ে চার্লি চ্যাপলিনের রোলে নিজেকে হিট করার রিস্ক বোধ হয় শ্রীদেবী-ই নিতে পেরেছিলেন।

যখন প্রতিটা হৃদয় তার কাজলের রেখা দিয়ে নিজেদের মনে "চাঁদনী" লিখে চলেছে, তখন তিনি অভিনয়ে উত্তেজনা তুলে রোম হর্ষক কায়দায় গেয়ে উঠলেন "I love you" ।
সেই আদুরে আবদারে পা দিয়ে, যেই মন দিয়ে দিল সকলে, তক্ষুনি কায়দায় বলে দিলেন, "মেরে হাতো মে ন ন চুড়িয়া হ্যায় থোড়া ঠেহেরো সজন মজবুরিয়া হ্যায়।"

কখনো মনের আনন্দের প্রকাশ করেছেন, পেখম মেলে "মোরণী বাগাম গেয়ে।" আবার, "তেরে মেরে হোঁটো মে মিঠে মিঠে গীত মিতওয়া" গেয়ে প্রেমচারিতার অন্য দিকের উদঘাটন করেছেন তিনি।

কখনো আবার কেরিয়ারের উজ্জ্বলময় স্বর্নালী দিনগুলোতে সম্মুখ সমরে দাঁড়িয়ে, প্রকাশ্যে বলেগেছেন, "ম্যা তেরী দুশমন, দুশমন তু মেরা", এই বলে শত্রুকে ছোবলের ভয় ঐ দুই চোখের ইশারাতেই দিয়ে দিয়েছিলেন। "নাগিন" চোখে না দেখাগেলেও, ওনার চোখের ইশারায় "নাগিনের" মাহাত্ম্য সমহিমায় প্রকাশ পেয়েছে।

এতো কিছুর পরোও যদি একটু গর্বান্বীত না হন তিনি, তা হলে কী আর মানায়!!! তাই রূপের রাণী "শ্রী" নিজেই বললেন, "মেরি বিন্দিয়া, তেরী নিন্দিয়া, না উড়াদে তো কেহনা!!"
সত্যি তো তার শিল্পের তৈরী করা মায়াজালে, তিনি বন্দী করে ফেলতে পেরেছিলেন আট থেকে আশিকে। সবারই তো ঘুম কাড়তে পেরেছিলেন, আর তার কাজল নয়নে তাকিয়ে পাগল না হয়ে বোধ হয় ঈশ্বরও ছাড় পাননি।

"রাপিচিকি লাকিচিকি, চিকিলাকি চিকিচুম" যাহহহ!!! কী ভাষায় গান গায়ছেন তিনি? কেউ বুঝল না, তবে তার এই সুর সবার মুখে ফিরতে লাগল।
সত্যি তিনি "স্বপ্নের রাণী" তাই তো, আজ যখন তিনি স্বর্গরাজ্যে পা দিলেন, তখনও কড়কড়ানি শব্দে প্রমান হলো 'বাদলে মোড়া চুল যার, আর ভঙ্গিতায় বিজলির সমানতা' তিনি কী আর নিঃশব্দে কোথাও প্রবেশ করতে পারেন? যখন 'দাপট' তার অলংকার। তবে নিঃশব্দে মিলিয়ে গেলেন আজ হাওয়াতে, আমাদের "হাওয়া হাওয়ায়ি।"

যখন বেশ কয়েক বছরের মৌন ব্রত কাটিয়ে বেরিয়ে এলেন "রাণী" তখন আবার তার নখরিলে কায়দায় "নবরায়ী মাজির" ঠুমকাতে ইংলিশ ও পুরো ফ্ল্যাট।
পেরিয়ে গেল সময়, সময়ের হিসেব পের করে। কখনো কখনো হয়তো জীবনের কঠিন টানাপোড়েনে তিনিও মিষ্টি স্বপ্ন চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন শান্তির ঘুম, তবে তখন ঘুম জোটেনি তার, শুধুই পরীক্ষার যোজ্ঞে আহুতি দিয়ে গেছেন।

তবে যখন কারোর যাওয়ার ডাক আসে, তাকে তো যেতেই হয়। তাই সেদিন "তু না যা বাদশা" বলেছিলেন বলে ঐদিন বাদশা থেমে গেলেও, আজ তার বেগম জুটির জোড় কেটে চলে গেল। তাই হয়তো রাত্রিতে মৃত্যু বেগমকে নিতে এলে, বাদশা "আমিতাভ" স্বয়ং অস্থির বোধ করেছিলেন।এতো শিল্পীর মনের সাথে আরেক শিল্পীর নীরব টান।

কেবল আজ নিঃশব্দে আমাদের "চাঁদনী" নিজের রেকর্ড তৈরী করেই, চলে গেলেন চিরতরে, আরো একবার বলে গেলেন সেই চিরন্তনী কথা গুলো, "কিসিকি হাত না আয়েগি ইয়ে লডকী।"

আর এই 'ছিল' থেকে 'ছিলেন' এর "সাদমা" কেও হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবে না আজীবন।

ইন্ডাস্ট্রি "শ্রী" কে হারালেও, তিনি সেখানে অমরত্বের দাবী নিয়ে "দেবী" রূপেই প্রতিষ্ঠিত থাকবেন জানি ও মানি।